রসুন দিয়ে মশা তাড়ানোর উপায়
মশার কামড়ে অতিষ্ঠ। মশা তাড়াতে চাচ্ছি প্রাকৃতিক উপায়ে কিন্তু মশা তাড়ানোর ঘরোয়া উপায় কি এই প্রশ্ন আপনার মনে ঘুরছে। আসুন আপনার প্রশ্নের সমাধান এই আর্টিকেলের মাঝেই রয়েছে।সাথে থাকবে খুবই গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্নের উত্তর মশা মারার ঔষধের নাম। তাই বেশি দেরি না করে চলুন মনোযোগ দিয়ে শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত প্রাকৃতিক উপায় গুলো দেখে নেই।
সাইজে এত ছোট্ট হলেও এর কামড়ে নড়ে ওঠে মানব শরীর।শুধু কি তাই এর কামড়ে হতে পারে ডেঙ্গু ম্যালেরিয়া চিকুনগুনিয়ার মত ভয়াবহ রোগ।সাথে মশার ভ্যান ভ্যান শব্দ তো লেগেই থাকে। কয়েল মশারি স্প্রে ব্যবহার করেও এই মশা তাড়ানো সম্ভব হয় না। তাই আজ চলুন জেনে নেই মশা তাড়ানোর ঘরোয়া উপায় কি
মশা তাড়ানোর মেশিন
সন্ধ্যা নামলেই মশার আক্রমণ বাড়ে।জানালার দরজা বন্ধ রেখেও মশার আগমন যেন আটকানো যায় না কেউ ধুপ ব্যবহার করেন আবার কেউবা কোয়েলের ভরসায় ছেড়ে দেন। কিন্তু আপনি কি জানেন যুগ এখন আধুনিক।মশা তাড়ানোর মেশিন এর মাধ্যমে মশা তাড়ানো হচ্ছে। তাই আজ যে গ্যাজেটটির কথা বলছি তার মাধ্যমে আপনি সহজেই মশা তাড়াতে পারেন।
ইলেকট্রনিক এলইডি মসকিটো রিপেল্লেন্ট জেপার মেশিন (Electronic LED Mosquito Repellent Zapper Machine) এই মেশিনটির সাহায্যে বাড়ি থেকে মশা অতি দ্রুত দমন করা সম্ভব এর দাম ৩৫০ টাকা থেকে শুরু হয় বাড়ির যে কোন জায়গায় এটি সেট করতে পারেন। মশা মেশিনটি স্পর্শ করা মাত্রই মারা যাবে এতে রয়েছে পরিবেশবান্ধব লাইট এই লাইট মশাদের আকৃষ্ট করে এবং মশা আসা মাত্রই শক খেয়ে মারা যায়।
মশা তাড়ানোর ২০টি কার্যকরী ঘরোয়া উপায় কি
১।লেমন গ্রাসঃ অনেকেই নাম শুনেছেন সুপ তৈরিতে এই লেমন গ্রাস ব্যবহার করা হয় কিন্তু এতে রয়েছে এক শক্তিশালী সুগন্ধ যা সাইট্রোনেলা অয়েল থেকে বের হয় এই সুগন্ধ মশাদের বিরুদ্ধে কাজ করে। তাই আপনার বাসায় যদি লেমন গ্রাস লাগানো থাকে বা সংরক্ষণ করা থাকে তবে মশা আপনার বাড়ির আশেপাশে অবস্থান নেবে না।
২।নিমের তেলঃ নিম মশারা পছন্দ করে না।এটি আপনার গায়ে মাখানো থাকলে মশা আপনার ধারে কাছে আসবে না।সেইসাথে নিমের তেলের বেশ উপকার রয়েছে এটি নারিকেল তেলের সাথে মিশিয়ে ত্বকে লাগাতে পারেন এতে আপনার ত্বকের জন্যেও এবং মশা থেকে দূরে রাখার জন্য উপকারী।
৩।লেবু ও লবঙ্গঃতো এই লেবু লবঙ্গের ব্যবহার হয়তো আপনারা জানেন। লেবু কয়েকটা টুকরো করে তাতে লবঙ্গের পুরোটা ঢুকিয়ে রাখবেন শুধুমাত্র মাথার অংশে বাইরে রেখে।এ দুটির একত্রে বিক্রিয়া করার মাধ্যমে মশা তাড়িয়ে থাকে।মশার উপদ্রব হলে এগুলো জানালা বা ঘরের যে কোন কোনাই রেখে দেবেন এতে কয়েকদিন মশার উপদ্রব কম থাকে।
৪।নিমপাতাঃবলা হয়েছে মসারা নিম পছন্দ করে না। তাই এর ব্যবহার কাজে লাগাতে নিমের পাতা গুঁড়ো করে ধুপের সঙ্গে ব্যবহার করলে মশা ঘরে প্রবেশ করে না এর সাথে নিশিন্দা পাতার গুঁড়ো মেশাতে পারেন দুটো একসাথে বেশ কার্যকরী।
৫। চা পাতাঃ ব্যবহার করার চা পাতা অর্থাৎ চা পাতি ফেলে না দিয়ে তা ভালোভাবে রোদে শুকিয়ে নিয়ে সেটি নিম পাতার মতো অর্থাৎ ধুপের সঙ্গে মিশিয়ে বুক জ্বালাতে পারেন এতে মশা মাছি পালিয়ে যায়।
৬।কর্পূরঃ কর্পূরের ব্যবহারের মাধ্যমে মশা তাড়ানো সম্ভব কেননা মশা কর্পূরের গন্ধ সহ্য করতে পারে না তাইকর্পূর কর্পূর পানিতে ভিজিয়ে রেখে দিতে হবে ঘরের যে কোন কোনাই এতে কিছুদিন মশার উপদ্রব কম থাকে এবং ২-৩ দিন পর পর কর্পূরের পানি পরিবর্তন করতে হবে। তবে এই পানি ফেলে না দিয়ে রান্না ঘরের মোছার কাজে ব্যবহার করতে পারেন এতে পিঁপড়ার উপদ্রব কমে।
৭।জমানো জল ফেলুনঃ মশারা পানিতে ডিম পাড়ে।তার জন্য স্থির পানের প্রয়োজন হয়। অসচেতন ভাবে বাড়ির যেকোন জায়গায় দেখবেন জমানো জল আছে যেখানে মশারা বংশবিস্তার করে। যেমন ফুলের টব টায়ার ভাঙ্গা কাজ বা বোতল অব্যাহত হাড়ি পাতিল বানালা নর্দমা। অনেক জল যাব জমজ মশার বংশবিস্তার রোধ করতে তা সরিয়ে ফেলতে হবে।
৮।কেরোসিন তেলঃ কেরোসিন তেল বোতলে নিয়ে তাতে কয়েক টুকরা কর্পূর মিশিয়ে সেটি ভালো করে ঝাকান সম্পন্ন নিয়ে রুমে বা বাড়ির আশেপাশে এই স্প্রেটি করুন মশা পালিয়ে যাবে।
৯ ।পুদিনা গাছঃ ঘরে কাঁচের জারে কয়েকটি পুদিনা গাছ রেখে দিন এবং ২-৩ দিন পর পর পানি বদলাতে থাকুন। পুদিনা পাতা শুধু মশাই নয় এর সাথে আরো অনেক ধরনের পোকামাকড় কে দূরে রাখে। এভাবে কাচের জারে পুদিনা গাছ রাখলে ঘরের সৌন্দর্য বৃদ্ধি পায় সাথে মশা তাড়ানোর কার্যকারী উপায় হিসাবে কাজ করে।
১০।ফ্যানের বাতাসঃ বাতাসের গতিবেগ ফ্যানের বাতাসের গতিবেগ মশার গতিতে গিয়ে তুলনায় অনেক বেশি হওয়ার কারণে ফ্যান চালু রাখলে মশার উড়তে পারেনা। বাতাসকে কাজে লাগাতে যেসব জানালা দিয়ে মশা ঢুকে সেখানে ঝড়-ফ্যান বা টেবিল ফ্যান রাখলে বাতাসের বিরুদ্ধে মশা ঘরে প্রবেশ করতে পারে না।
১১। মশার প্রিয় রংঃ বিষয়টা অদ্ভুত হলেও এটা সত্য যে কিছু কিছু মশার প্রজাতি রংয়ের প্রতি আকৃষ্ট হয় যেমন লাল নীল ও কালো।এজাতীয় রং বেছে পড়লে মশার উপদ্রব কিছুটা কমানো যায়।
১২। রসুনের স্প্রেঃ কয়েকটা রোশন সিলিন্ডারে নিয়ে ভালোভাবে পেস্ট করে নিন এতে পানি দিয়ে মিশ্রণটি হালকা করে নেন। এই মিশ্রণ স্প্রে বোতলে ভরে ঘরের আশেপাশে অথবা বাচ্চারা বাইরে খেলতে গেলে যেসব অংশের মশা কামড়াতে পারে এবং সেসব অংশে সেসব অংশে স্প্রেটি করলে মশা কামড়ায় না।
১৩।সুগন্ধির ব্যবহারঃ রাতে ঘুমাতে যাওয়ার আগে অথবা যে কোন সময় পারফিউম আতর বাল্যশান মাখলে শরীরে সুগন্ধ বের হয় এবং মশারাও দূরত্ব বজায় রাখে কেননা মশা সুগন্ধি পছন্দ করে না।
১৪। তুলসী গাছঃ তুলসী একটি ভেষজ গাছ যা ওষুধে গুণাগুনে ভরপুর। মশাই নয় বিভিন্ন পোকামাকড় কেউ দূরে রাখতে সহায়তা করে পুদিনা গাছের মতোই এটি কাচের জারে ডুবিয়ে রাখতে পারেন তবে সবচেয়ে ভালো হয় বাড়ির টবে তুলসী গাছ লাগিয়ে রাখলে।
১৫। তেজপাতাঃ তেজপাতার বহু ব্যবহার রয়েছে যার মধ্যে মশা তাড়ানো একটি।টেরপেনয়েড হল সেকেন্ডারি মেটাবলাইট যৌগ যা তেজপাতার নির্যাসে রয়েছে এটি মশা তাড়াতে ব্যবহৃত হয়।রসুন পাতা করে এবং কর্পূর গুঁড়া মিশিয়ে তা তেজপাতার গায়ে লাগিয়ে দিতে হবে এরপর তেজপাতা পোড়াতে হবে তেজপাতার ধোঁয়া মশা তাড়াতে সাহায্য করে।
১৬। ইউক্যালিপটাস তেলঃইউক্যালিপটাস তেল মশা নিরোধক। এটা যেকোনো ফার্মেসি বা মুদি দোকানে সহজে পাওয়া যায়। নারিকেল তেলের সাথে ইউক্যালিপটাস তেল মিশিয়ে শরীরে স্প্রে করে নিতে পারেন।
১৭। নারিকেলের আঁশঃ নারিকেলের আঁশ মশা তাড়ায় নারিকেলের আঁশ জমিয়ে এতে আগুন ধরালে এর ধোঁয়া নিমিষেই মশা দূর করে।
১৮। ভিনেগারঃ বড় বাটি বা গামলাতে ভিনেগার এবং সমপরিমাণ পানি নিয়ে তাতে কয়েক চামচ চিনি যোগ করুন এর সাথে ভীমের গুড়া যোগ করে ভালোভাবে পানির সাথে মিশিয়ে নিন এরপর গামলাটি জানালার পাশে রেখে দিন এতে মশার আকৃষ্ট হয়ে সেই পানিতে বসবে এবং মারা যাবে।
১৯।এশিয়ানশিয়াল ওয়েলঃ স্প্রে বোতলে চার ভাগের এক ভাগ আপেল সিডার ভিনেগার এবং চার ভাগের এক ভাগ পানি সাথে রোজ মেরী তেল দুই চামচ যোগ করে ভালোভাবে মিশিয়ে নিতে হবে পর সেটি স্প্রে করলে মশা পালিয়ে যায়।
২০। পেঁয়াজের খোসাঃ কে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে সালফার সালফার মশা তাড়াতে সাহায্য করে। পেঁয়াজের খোসা ফেলে না দিয়ে তারা একত্রে জমা করে পানিতে ভিজিয়ে রাখতে হবে। এরপর তার রোদে ভালোভাবে শুকিয়ে নিয়ে আগুনে পোড়াতে হ… এতে খোসার মধ্যে থাকা সালফার গুলো বাতাসে মিশে যাবে এবং মশা তাড়ানোর কাজ করবে।
রসুন দিয়ে মশা তাড়ানোর উপায়
মশার শত্রু হল রসুনের গন্ধ।মশা তাড়াতে রসুনের স্প্রে ব্যবহার করুন এর জন্য মিক্সার ব্লেন্ডারের ভালোভাবে রসুনকে তরলের মত ব্লেন্ড করে নিতে হবে এরপর ছাঁকনি দিয়েছে কে স্প্রে বোতলে নিয়ে স্প্রে করতে হবে। বিছানার আশেপাশে কাঁচা রসুন থেঁতলে রেখে দিলে মশা গাছে ঘষে না। মশারির সাথে কাচা রসুনের কোয়া বা রসুন বাটা হালকা করে ঘষে দিলে কিছুদিন মশার উপদ্রব কম হয় এভাবে কয়েক দিন পর পর রসুন ব্যবহার করতে হবে।
ন্যাপথলিন দিয়ে মশা তাড়ানোর উপায়
মশাদের কাছে ভয়ংকর ব্যাপার হলো এই কর্পূর বা ন্যাপথলিন। ঘরের যেসব জায়গায় মশারা অবস্থান করতে পারে এমন জায়গায় কর্পূরের বড়ি রেখে দিন এতে বাতাসের সাথে সুগন্ধ ছড়াবে এবং মশার উৎপাত কমাবে। ন্যাপথলিন শুধু মশাই নয় কীটনাশক হিসাবে ছারপোকা তাড়াতে পিঁপড়া দূর করতে এবং কাপড়ের আলমারিতে ব্যবহার করা হয়।
গোয়াল ঘরের মশা তাড়ানোর উপায়
লেবু কেটে তাতে লবঙ্গ ঢুকিয়ে দিতে হবে শুধু মাথার অংশ বাইরে থাকবে। এভাবে লেবু ও লবঙ্গ একত্রে করে গোয়াল ঘরের চতুর্দিকে ছড়িয়ে ছিটিয়ে রাখতে হবে এর কাজ আপনা আপনি দেখাবে। ছাড়াও নিম পাতার গুঁড়া ধুনোর সাথে ব্যবহার করলেও মশা তাড়ানো যায়। রসুনের কোয়া থেতলে তা আশেপাশে ছড়িয়ে ছিটিয়ে রাখলে মশার উপদ্রব কমানো যায়।
তেজপাতা দিয়ে মশা তাড়ানোর উপায়
ছেলের সাথে কর্পূরের গোড়া মিশিয়ে তা তেজপাতার উপর প্রলেপ দিয়ে দিতে হবে এবং সেই তেজপাতা আগুনে পুড়ালে ধোঁয়া সৃষ্টি হয় এ ধোঁয়া মশার আর সহ্য করতে পারে না।রসুন বাটার সাথে সামান্য তেজপাতা গুড়া এবং কর্পূর বুড়া মিশেও একটি মিশ্রণ তৈরি করা যায় এই মিশ্রণ সরিষার তেলে ঢেলে তা স্প্রে করলে মশা নিমিষে তাড়ানো যায়।
মশা মারার ঔষধের নাম
প্রাকৃতিক উপায়ে মশা নিধন ছাড়াও মশা মারার জন্য কিছু ঔষধ রয়েছে। কিন্তু লক্ষ্য রাখতে হবে পরিবেশবান্ধব কিনা নিচে কয়েকটি মশা মারার ওষুধের নাম দেয়া হলো।DEET, picaridin এবং IR3535 এটি হলো বিশেষজ্ঞদের মতে সবচেয়ে কার্যকরী। সপ্তাহে ৬০ এমএল এর পরামর্শ দিয়ে থাকেন বিশেষজ্ঞরা।
লেখকের মন্তব্য
আমার মতে মশা সবচেয়ে বেশি বিরক্তিকর ক্ষুদ্র প্রাণী যা সহজে মারা যায় না তবে প্রাকৃতিক ভাবে মশা তাড়ানোর ২০টি কার্যকরী ঘরোয়া উপায় কি জানলে সহজেই মশা তাড়াতে পারি এছাড়াও আমরা জেনে নিতে পারি মশা মারার ঔষধের নাম। সকল এ সমস্ত তথ্য আশা করি এই আর্টিকেলে আপনি পেয়ে গেছেন।
মশা সবার ঘরেই বিনা আমন্ত্রিত অতিথি তাই মশা তাড়ানোর ঘরোয়া উপায় গুলো নিজে চেষ্টা করুন এবং আত্মীয়-স্বজন ও বন্ধু-বান্ধবদের জানিয়ে দিতে আর্টিকেলটি শেয়ার করে দিন। লেখাটি ভালো লাগলে অবশ্যই সাথে থাকবেন এই ওয়েবসাইটের। এবং ধন্যবাদ আপনাকে এতক্ষণ সাথে থাকার জন্য।
্ধন্যবাদ