গরমে ত্বকের যত্ন ঘরোয়া উপায়
মানুষের সবচেয়ে বড় অঙ্গটি হলো ত্বক যা আমাদের সমস্ত শরীরের উপরিভাগ আচ্ছাদন করে রাখে। এটি বিভিন্ন রোগ জীবাণু আলোকরশ্মি আবহাওয়া এবং আঘাতের একটি প্রতিবন্ধক হিসাবে কাজ করে। ত্বকের যত্ন নিতে আমাদের অবশ্যই অত্যান্ত সতর্ক থাকতে হবে এটি খুবই নমনীয় একটি অঙ্গ। গরম ও শীতকালে ত্বকের ভিন্ন ভিন্ন যত্নের মাধ্যমে এটিকে সতেজ রাখা খুবই জরুরী।
গরমে কিভাবে ত্বকের যত্ন নিবেন এটি জানতে হলে আপনাকে আগে বুঝতে হবে কেন আমাদের ত্বকের যত্ন নেওয়া উচিত। গরমে সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত হয় আমাদের ত্বক। সময় আবহাওয়া শুষ্কতার কারণে আমাদের তরফ থেকে জলীয় বাষ্প বের হতে থাকে ঘাম আকারে এবং তা ত্বকে চিটচিটে ভাব সৃষ্টি করে। যে কারণে ত্বক হয়ে পড়েন নিস্তেজ এবং জেল্লাহীন।
গরমে শরীরের যত্ন নিবেন যেভাবে
আমরা আনেক সময় ভুলে যায় যে ত্বক বলতে শরীর ঘাত পা মুখ সকলকে বোঝায়। অনেকে আছেন যারা শুধু সহকারে খেয়াল রাখেন কিন্তু হাত-পা রোদে পুড়ে কালো হয়ে যায় অথবা শরীরের বিভিন্ন অংশে ঘামাচি দেখা দেয়। এজন্য আমাদের মুখের পাশাপাশি শরীরের যত্ন নিতে হবে।
১। গোসল করার পর আমাদের ত্বক শুষ্ক থাকে।এই সময় বডি লোশন ব্যবহার করতে হবে।
২। অত্যন্ত গরমের কারণে ঘাম জমে জমে শরীরে দুর্গন্ধ হয় এবং সেইসাথে ঘামাচি তৈরি হয়। অতিরিক্ত ঘাম হয় সেখানে পাউডার ব্যবহার করতে হবে।
৩। নিয়মিত গোসল করা এবং সাবান ব্যবহার করা এতে ঘামে তৈরি হওয়া জীবাণু ধ্বংস হবে।
৪।যারা অতিরিক্ত ঘেমে যায় তাদের পোশাক পরিবর্তন করা উচিত। ভিজে যাওয়া পোশাক থেকে বিভিন্ন ধরনের রোগ জীবাণুর বিস্তার হতে পারে।
গরমে হাত ও পায়ের যত্ন
সব সময় মুখের যত্ন নিতে নিতে পায়ের কথা ভুলে যায় অথচ হাত ও পায়ের রঙের কালার এ মিল না থাকলে অনেক লজ্জায় পড়তে হয়। আর এই গরমে হাত ও পায়ের অবস্থা সানট্যান এর কারণে অনেক কালচে রংয়ের হয়ে যায়। পদ্ধতি গুলো অনুসরণ করে গরমে হাত পায়ের যত্ন নিতে পারেন।
১। টক দই সানট্যান এর হাত থেকে রেহাই দেয়। শুধুমাত্র টকবই হাতে পায়ে ব্যবহার করে অপেক্ষা করুন কিছুক্ষণ পর ধুয়ে ফেলুন। এতে অনেকটা ট্যানিং কেটে যায়।
২।কুসুম গরম পানিতে যে কোন শ্যাম্পু ও তাতে অর্ধেক লেবুর রস মিশিয়ে হাত পা ৭ থেকে ১০ মিনিট ভিজিয়ে রাখতে হবে। এরপর হালকা হাতে হাত পা পরিষ্কার করে নিতে হবে।
৩।অর্ধেক লেবুর রস হাফ চামচ হলুদ এবং এক চামচ শসা পেস্ট একত্রে মিশিয়ে হাতে পায়ে ব্যবহার করতে হবে শুকনো হওয়া পর্যন্ত ১৫ দিন ব্যবহার করার মাধ্যমে ফলাফল পাওয়া যেতে পারে।
৪। এক চামচ কফির সাথে এক চামচ চিনি এক চামচ লেবুর রস মাখিয়ে নিতে হবে। এটি হাতে পায়ের মুখে সব জায়গায় ব্যবহার করে শুকনো হওয়া পর্যন্ত অপেক্ষা করুন এবং ঠান্ডা পানিতে ধুয়ে ফেলুন।
৫।ত্বকে সাইন আনতে সাহায্য করে দুধ। গুড়া দুধের সাথে এক চামচ মধু ও এক চামচ লেবুর রস মিশিয়ে হাতে পায়ে ব্যবহার করুন। সাত দিন ব্যবহারে ত্বকে সাইন আনতে সাহায্য করে।
ঘরোয়া পদ্ধতিতে ত্বকের যত্ন
১।এই গরমে ত্বকের যত্ন নিতে প্রচুর পরিমাণে পানি পান করতে হবে।
২। এলোভেরার সাথে মধু মিশিয়ে তা ফেসপ্যাক হিসাবে ব্যবহার করতে পারেন।
৩। খুবই সাধারণভাবে শসা কেটে ব্লেন্ডারের ব্লেন্ড করে তা মুখে ব্যবহার করতে পারেন। বলার বাকি থাকে না শসা খুবই একটি উপকারী ফল এ গরমের জন্য প্রাকৃতিকভাবে ত্বকের যত্ন নিয়ে সৌন্দর্য ফুটিয়ে তোলার জন্য শসা খাওয়ার বিকল্প নেই।
৪। এই গরমে ত্বকের যত্ন নিতে ভিটামিন সি যুক্ত ফল খেতে হবে। ভিটামিন সি ত্বকের কাঠামোকে টন টাইট করে রাখে।
৫।অতিরিক্ত ঘামে গরমে ত্বকের যত্ন নিতে তারা মুলতানি মাটি ব্যবহার করতে পারে। এটি তৈলাক্ত মুখে শুষ্কতা আনতে সাহায্য করে।
৬। নির্দিষ্ট সময় পর পর মুখ হাত পানি দিয়ে পরিষ্কার করা।
৭ ।গরমের কারণে পরিমিত ঘুম ও বিশ্রামের অভাবে অনেক সময় ত্বকের উপর প্রভাব পড়ে। এর কারণে পরিমাণ মতো ঘুম এবং সঠিক খাবারের মাধ্যমে ত্বককে সুস্থ রাখা সম্ভব।
গরমে শিশুদের ত্বকের যত্ন
শিশুদের ত্বক বড়দের মতো এত সুগঠিত নয়। এদের এক্সট্রা কেয়ার এর প্রয়োজন। তীব্র এই গরমে শিশুদের ত্বকে এলার্জি ফোড়া,র্যাশ,ঘামাচি ইত্যাদি সমস্যা দেখা দিতে পারে। সময়মতো গোসল করানো এবং সাবান ব্যবহার করতে হবে। কিন্তু অতিরিক্ত সাবান ব্যবহারের ফলে শিশু ত্বকহয়ে যেতে পারে। শিশুদের জন্য খুব গুরুত্ব সহকারে গোসলের পর মশ্চারাইজার ব্যবহার করতে হবে।
গরমের জন্য সুতি এবং ঢিলেঢালা পাতলা কাপড় পরানো উচিত। গরমে শিশু ঘেমে গেলে সাথে সাথে ঠান্ডা পানি দেওয়া বা ঠান্ডা পানিতে গোসল করানো উচিত নয়। তাৎক্ষণিক তাৎক্ষণিক প্রশান্তির পেলেও সেটা শিশুর জন্য ক্ষতিকর। শরীরের ঘাম মুছে স্বাভাবিক তাপমাত্রায় আসার পর তাকে গোসল করানো উচিত। ত্বকের ভাজে ভাজে গরমে ঘেমে যাওয়ার কারণে অনেক সময় ব্যাকটেরিয়া ভাঙ্গাস এবং ময়লা জমতে পারে। ত্বকের এই ভাজগুলোতে বেশি লক্ষ্য রাখা দরকার।
- গরমে শিশুর ত্বককে হাইড্রেটেড রাখা,
- ত্বককে মসৃণ রাখা,
- ত্বকের আর্দ্রতা বজায় রাখা,
- ঘনঘন লোশন মাখা,
- সময় মত গোসল করানো,
- প্রচুর পরিমাণে তরল পান করানো,
- নরম সুতি ও ঢিলেঢালা পোশাক পরান্
- তেল ব্যবহার থেকে বিরত থাকা।
শিশু গ্রীষ্মের কারণে পানি শূন্য হতে পারে এজন্য আপনাকে নিশ্চিতে শিশুর ঠিকমত তরল খাচ্ছে কিনা যদি মায়ের দুধ ছাড়া অন্য কিছু খেতে পারে তবে গ্রীষ্মকালীন ফল যেমন তরমুজ আমের জুস এসব তরল খাবার বেশি বেশি খাওয়ানোর মাধ্যমে শিশুকে হাইড্রেটেড রাখা সম্ভব। এইভাবে শিশুর যত্নে যত্নশীল হলে গরমে আপনার শিশু থাকবে উজ্জ্বল ও চঞ্চলে।
তৈলাক্ত ত্বকের যত্ন
তৈলাক্ততা কারোরই পছন্দ নয়।গরমকালে মেকআপ করে বের হলেও সেই তেল চিটচিটে ভাব কিছুক্ষণ পরই আবার ফিরে আসে। যেটা অনেক বিরক্তির কারণ। এই অতিরিক্ত তৈলাক্ততা ত্বকে ব্রণের সমস্যা সৃষ্টি করে বেশি। সঠিক নিয়মে তৈলাক্ত ত্বকের যত্ন নিতে না পারলে মুখে ছোট-বড় নানান ব্রণ সৃষ্টি হতে পারে।
অনেকে না জানার কারণে রাসায়নিক প্রসাধানি বেশি ব্যবহার করে থাকেন এতে ফলাফল উল্টো হতে পারে। তাই গরমকালের ত্বকের যত্ন নিতে ত্বক বার বার তৈলাক্ত হয়ে যাওয়ার কারণে কিছু টিপস ফলো করা দরকার।এ সময় গরমের ত্বকের যত্ন নিতে আপনি বেছে নিতে পারেন বেশ কিছু ঘরোয়া উপায়।
মুলতানি মাটির প্যাক
শুধু মুলতানি মাটি পানির সাথে মিশিয়ে ও সাথে এক চা চামুচ চন্দনের গুড়া মিশিয়েনিতে হবে।এরপর সেটি মুখে লাগিয়ে নিন।পনেরো বিশ মিনিট আপেক্ষা করে ঠান্ডা পানি দিয়ে ধুয়ে নিতে হবে। মুলতানি মাটি তৈলাক্ত মুখে ব্যবহার করলে শুষ্কতাএনে দেয়। অথবা গোলাপ জলের সাথে মুলতানি মাটি যোগ করে সেটি পেস্ট হিসাবে মুখে ব্যবহার করলেও অনেক উপকার পাওয় যায়।
আলোভেরা
এলোভেরা ত্বকের জন্য খুবই উপকারী। শুধুমাত্র ত্বকের জন্য নয় এটি হাতে পায়ের মুখে এমন কিছু এর যত্নে ব্যবহৃত হয়ে থাকে।এলোভেরা থেকে এর ভিতরের জেল বের করে তা দিয়ে প্যাক বানিয়ে অথবা শুধুমাত্র এলোভেরা দিয়ে মুখ পরিষ্কার করুন।এলোভেরা ত্বক টানটান রাখতে সাহায্য করে। এটি অয়েলি স্কিনে পিম্পল দূর করে ত্বকের বলি রেখা কমায় এবং ত্বকে সজীব রাখে।
কর্নফ্লাওয়ার
পরিমাণ মতো কর্নফ্লাওয়ার এর সাথে একটু মধু এবং শসার রস মিশিয়ে সেটি পেস্ট বানিয়ে মুখে ব্যবহার করতে পারেন। এটি হাতে পায়ে ও শরীরের যে কোন অংশে ব্যবহার করতে পারেন।
লেখকের মন্তব্য
এই গরমে ত্বকের যত্ন নিতে না জানলে অতি দ্রুত ডিহাইড্রেশন এবংসান টেনিং এর কারণে আপনার ত্বক হয়ে যেতে পারে শুষ্ক ও রুক্ষ তাই কিভাবে গরমের যত্ন নিবেন আশা করি উপরের আর্টিকেলে তা জানতে পেরেছেন। লেখাটি আপনার ভালো লাগলে বন্ধুদের সাথে শেয়ার করতে পারেন আরো নতুন নতুন তথ্য পেতে ওয়েবসাইটের সাথেই থাকুন ধন্যবাদ।
অর্ডিনারি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url