স্যালাইন খেলে কি প্রেসার বাড়ে

 সঠিক নিয়ম না জেনে অতিরিক্ত স্যালাইন গ্রহণের ফলে উপকার এর বদলে মারাত্মক ক্ষতি সাধন করতে পারে কোটি মানুষের প্রাণ বাঁচানো এই স্যালাইন।।এই আর্টিকেলে থাকছে খাবার স্যালাইন তৈরির  নিয়ম,স্যালাইন বেশি খেলে কি হয,কতটুকু খাওয়া যায় ,এতে প্রেসার বাড়ে কিনা,স্যালাইনের মেয়াদ এই সব কিছু নিয়ে বিস্তর আলোচনা।

মুখে অথবা শিরার মাধ্যমে প্রয়োজনীয় পরিমাণ লবণ মিশ্রিত পানি প্রদান করা হয় মূলত এটিই হলো স্যালাইন। নিরাপদ খাবার পানির অভাবে ডায়রিয়া কলেরা জাতীয় রোগ হয়ে থাকে ।এ সময় ঘন ঘন পাতলা পায়খানা হওয়ার কারণে খুব দ্রুত সময়ের মধ্যে শরীর থেকে প্রচুর পরিমাণে পানি ও সাথে সাথে লবন ও বের হয়ে যায়। এমতঅবস্থায় স্যালাইন আমাদের সেই প্রয়োজনীয় পানি ও লবণের ঘাটতি পূরণ করে থাকে।

স্যালাইন কত প্রকার

আমরা অনেকেই স্যালাইন খেয়ে থাকি কিন্তু আসলে জানিনা স্যালাইন কত প্রকার হয় এবং কি কি? আসুন জেনে নেই স্যালাইনের প্রকারভেদ। স্যালাইন দুই প্রকার।

১।ওরাল বা মুখে খাওয়া স্যালাইন।

২।ভেইন এ দেওয়ার স্যালাইন।

স্যালাইন বা খাবার স্যালাইন হচ্ছে শরীরের পানি ও লবণ ঘাটতি পূরণ করার জন্য প্রয়োজনীয় লবণ ও গ্লুকোজের মাত্রা মিশ্রিত করেতৈরি করা হয়।

খাবার স্যালাইন তৈরির নিয়ম

হাতের কাছে খাবার স্যালাইন এর প্যাকেট না থাকলে ঘরে বসেই নিজে নিজে সঠিক পরিমাণ অনুযায়ী উপাদান মিশিয়ে স্যালাইন তৈরি করা সম্ভব।

১। একটি শুষ্ক পরিষ্কার পাত্রে এক লিটার খাবার পানি নিন।
ফ্রিজের ঠান্ডা পানি হলে তা স্বাভাবিক তাপমাত্রায় আনতে হবে। এবং বিশুদ্ধ করার জন্য পানি ফুটিয়ে নিলে সেটিও স্বাভাবিক তাপমাত্রায় আনতে হবে।

২। আধা চা চামচ পরিমাণ লবণ মিশাতে হবে।

এক লিটার বিশুদ্ধ খাবার পানির জন্যআধা চা চামচ পরিমাণ লবণ এবং দুই লিটার পানির জন্য এক চা চামচ পরিমাণ লবণ ভালো করে নাড়ানি দিয়ে মিশিয়ে নিতে হবে।

৩।ছয় চা চামচ চিনি মিশাতে হবে।
চামচ দিয়ে চিনি নেওয়ার সময় চামচকে ঝাকিয়ে নিন যাতে প্রতিটি চামচে চিনির পরিমাণ সমান হয়। এরপর মিশ্রণটিকে ভালোভাবে মিশিয়ে নিতে হবে।

এসএমসি ওরস্যালাইন খাওয়ার নিয়ম

দোকান থেকে প্যাকেটজাত খাবার স্যালাইন কিনলে প্যাকেটের গায়ে নির্দেশনা অনুযায়ী স্যালাইন তৈরি করে নিতে হবে। ৫০০ মিলি বা আধা লিটার পানিতে প্যাকেটের সম্পূর্ন পরিমান মিশিয়ে নিতে হবে।এ ব্যাপারে সতর্ক থাকতে হবে পানি পানির পরিমাণ কমানো যাবে না এবং স্যালাইনের পরিমাণও কমানো যাবে না।কম করাও যাবে না বেশি দেওয়াও যাবে না।

অনেকে নিজের ইচ্ছা মত অল্প পানির সাথে অল্প স্যালাইন মিশিয়ে তা পান করে থাকেন কিন্তু এটি করা একদমই উচিত নয়। এটি ১২ ঘণ্টা পর্যন্ত সংরক্ষণ করা যায় এর বেশিক্ষণ রাখা উচিত নয়।বারো ঘন্টার বেশি হলে সেটি ফেলে দিয়ে পুনরায় আবার তৈরি করতে হবে।

স্যালাইন খাওয়ার উপকারিতা ও অপকারিতা

ভেইনে দেওয়ার শালার সব সময় হাতের কাছে পাওয়া যায় না বলে বিজ্ঞানীদের নতুন আবিষ্কার হচ্ছে ওর স্যালাইন এই স্যালাইন এর মাধ্যমে আমরা খুব দ্রুত শরীরের লবনের চাহিদা মেটাতে পারি।সোডিয়াম এবং পটাশিয়াম এর চাহিদা পূরণ করতে পারি এই স্যালাইনের মাধ্যমে তবে না বুঝে বিশেষ কোনো কারণ ছাড়াই স্যালাইন খাওয়া একটি বিশেষ প্রচলন হয়ে গিয়েছে।

বলেই এর অপকারিতা ভয়াবহ রূপ ধারণ করতে পারে।দীর্ঘমেয়াদি রোগ হিসাবে উচ্চ রক্তচাপ স্যালাইন খাওয়া অপব্যবহারের ফলসরুপ হিসাবে দাগ কেটে রেখেছে।তাই সঠিক নিয়মে স্যালাইন খাওয়ার উপকারিতা এবং অপকারিতা জেনে রাখা সকলের উচিত।

স্যালাইন খাওয়ার উপকারিতা

লাইন খাবার পরে ডায়রিয়া বা কলেরা জনিত রোগের কারণে অল্প সময়ের মধ্যে অধিক পরিমাণ পানি শরীর থেকে বের হয়ে যাওয়ার কারণে পানি এবং সেই সাথে লবণের ঘাটতি দেখা দেয়। এ সময় ইনস্ট্যান্ট লবণের চাহিদা পূরণ করে খাবার স্যালাইন। এটি পানি শূন্যতার অভাব পূরণ করে থাকে। শরীরের গ্লুকোজের পরিমাণ কমে গেলে এটি এনার্জি জোগাতে দ্রুত সাহায্য করে।

সাথে শরীরের ক্লান্তি ভাব দূর করে। যাদের পেশার লো রয়েছে তাদের পেশার স্বাভাবিক আনতে খাবার স্যালাইন খাওয়ানো হয়। গর্ভাবস্থায় গর্ভবতী বমি করার ফলে শরীর থেকে ইলেকট্রোলাইটের ঘাটতি দেখা যার কারণে স্যালাইন খাওয়ার উপদেশ দেয়।

স্যালাইন খাওয়ার অপকারিতা

একজন সুস্থ মানুষের খাবার লবনের চাহিদার মাত্রা হল 6 গ্রাম আধা চামচেরও কম।এবং প্যাকেট স্যালাইনের গায়ে লেখা থাকে এক প্যাকেট স্যালাইনে থাকে 1.3 g সোডিয়াম। আমরা জেনে না জেনে গরমে ক্লান্ত হয়ে যখন তখন খাবার স্যালাইন খেয়ে থাকি যেটা একদমই উচিত নয় বিশেষ প্রয়োজন ছাড়া বমি পাতলা পায়খানা বা জ্বর হওয়া ছাড়া স্যালাইন ঘন ঘন গ্রহণ করলে এতে থাকা সোডিয়াম ও পটাশিয়াম এর মাত্রা শরীরের চাহিদার চেয়েও বেশি শরীরে প্রবেশ করে থাকে।

 এটি রক্ত এবং কোষের বাহিরে উপস্থিত রসের সাথে মিশে রক্তচাপ বাড়িয়ে দেয় এবংপোস্ট থেকে পানি বেরিয়ে আসতে থাকে এতে কোষের পানির রক্তে চলে আসায় রক্তচাপ বেড়ে যায় মস্তিষ্কের বিভিন্ন স্থানে পানি জমে এতে রোগী অজ্ঞান এবং মৃত্যুমুখী হতে পারে ।২০১৭ সালের গবেষণায় দেখা গেছে বাংলাদেশের একজন মানুষ দৈনিক 17 গ্রাম লবণ গ্রহণ করে থাকেন ।

অর্থাৎ স্বাস্থ্যকর মাত্রার তিনগুণ। লবণ গ্রহণের ফলে দীর্ঘমেয়াদি রোগের মধ্যে রয়েছে উচ্চ রক্তচাপ কিডনি বিকল হয়ে পড়া হার্ড ক্ষতিগ্রস্ত হওয়া দৃষ্টিজনিত সমস্যা ও স্ট্রোক। সুতরাং সঠিক নিয়ম না জেনে যেকোনো কারণে অতিরিক্ত স্যালাইন গ্রহণের ফলে উপকার এর বদলে মারাত্মক ক্ষতি সাধন করতে পারে কোটি মানুষের প্রাণ বাঁচানো এই স্যালাইন।

স্যালাইন খেলে কি ওজন বাড়ে

স্যালাইন খেলে ওজন বাড়ে না লবণের পরিমাণ বাড়ায়। কিছু কিছু স্যালাইন আছে যা চর্বি কমিয়ে থাকে। এই স্যালাইন গুলোতে উত্তেজক পদার্থ বা মেটাবলিজম থাকার কারণে চর্বি গোলতে সাহায্য করে কিছু কিছু সেলাইনে উত্তেজক পদার্থ থাকে যেমন ক্যাফিন,গ্লুটামিন ইত্যাদি।

স্যালাইন খেলে কি প্রেসার বাড়ে

স্যালাইন খেলে প্রেসার বাড়ে যাদের লো প্রেসার রয়েছে তারা স্যালাইন খাওয়ানোর মাধ্যমে তাৎক্ষণিক প্রেসার বাড়াতে পারেন। সেলাইন প্রেসার বাড়াতে সাহায্য করে। এছাড়াও বাড়িতে তৈরি ছয় চা চামচ চিনিরআধা চা চামচ লবণ বিশুদ্ধ এক লিটার পানিতে মিশিয়ে খেতে পারেন।কিন্তু যাদের উচ্চ রক্তচাপ রয়েছে তাদের লবণ খাওয়া তো দূরে থাক স্যালাইন খাওয়ার উপরেও নিষেধাজ্ঞা থাকে।

 তবে যদি রোগীর ডায়রিয়া ঘন ঘন বমি হয়ে থাকে তবে তাদের লবণ ঘাটতি দেখা দেয় এক্ষেত্রে তাদের রক্তচাপ শিথিল হয়ে আসে।এসময় তারা স্যালাইন খেতে পারে।যেহেতু স্যালাইন খেলে অতিরিক্ত লবণ শরীরে প্রবেশ করে তাই যাদের উচ্চ রক্তচাপ রয়েছে তাদের এটি খাওয়া উচিত নয়। কিন্তু শরীর থেকে দ্রুত লবণ পানি হারানোর ফলে তারা স্যালাইন খেতে পারে এতে তাদের রক্তচাপ পারে না বরং স্বাভাবিক বজায় রাখার চেষ্টা করে।

স্যালাইন খেলে কি পায়খানা কষা হয়

ডায়রিয়া হলে এই সময় প্রচুর তরল বা তরল জাতীয় খাবার খাওয়া দরকার বিশেষ করে খাবার স্যালাইন বা চিড়ার পানি, ভাতের মার ইত্যাদি পানি পানির যোগান দিয়ে থাকে। পাতলা পায়খানা হলে শরীরের লবণের ঘাটতিও দেখা দেয় এ সময়ের একটি প্রচলিত খাবার হচ্ছে কাঁচা কলা বা কাঁচা কলার তরকারি।কাঁচা কলায় আয়রন থাকে ।

এবং আয়রন কোষ্ঠকাঠিন্য করতে সহায়তা করে তাই কাঁচা কলা পাতলা পায়খানার একটি প্রচলিত খাবার। ডায়রিয়া হয় মূলত বিশুদ্ধ পানির অভাবে এবং ডায়রিয়া হলে প্রচুর লবণের ঘাটতি দেখা যায় তাই লবণের ঘাটতি পূরণ করে এমন খাবার খেলেই ডায়রিয়া অর্থাৎ পাতলা পায়খানা মোকাবেলা করা সম্ভব। তাই ডায়রিয়া হলে পর্যাপ্ত পরিমাণ খাবার স্যালাইনই যথেষ্ট এবং এর সাথে সাধারণ খাবার তেমন কোন অসুবিধা হবে না।

শরীর দুর্বল হলে কোন স্যালাইন দিতে হয়

শুধুমাত্র শরীর দুর্বল হওয়ার কারণে মুখে বা শিরাপথের স্যালাইন নেওয়া একদমই উচিত নয়। যদি শারীরিক দুর্বলতা ডায়রিয়াজনিত কারণে বা বমি হওয়ার কারণে আসে তবে খাবার স্যালাইন গ্রহণ করা দরকার। নিরাপদে যে স্যালাইনের ক্যালরি মাত্রা সর্বোচ্চ সেটির মধ্যেও ক্যালোরি মাত্রা এক প্লেট ভাতের ক্যালরির চেয়ে অনেক কম। 

তাই আপনাকে আগে এটি বুঝতে হবে যে যাদের মুখে ভাত খাওয়ার শক্তিএকেবারেই নেই তাদের জন্য নিরাপদে স্যালাইন দেওয়া হয়। স্যালাইনের চেয়ে খাবার খেলে বেশি শক্তি পাওয়া সম্ভব শুধুমাত্র দুর্বলতার কারণে স্যালাইন খাওয়া বা নিরাপদে স্যালাইন নেওয়াটি একদমই ভুল একটি ধারণা এতে কিডনি এবং হার্টের সমস্যা হতে পারে তাই ডায়রিয়ার ব্যতীত শারীরিক শারীরিক দুর্বলতার কারণে স্যালাইন গ্রহণ করার আগে আপনাকে চিকিৎসকের সাথে পরামর্শ করে নিতে হবে।

বাচ্চাদের স্যালাইন এর নাম

শিশুর ডায়রিয়া হলে পর্যাপ্ত পরিমাণে খাবার স্যালাইনের পাশাপাশি তরল খাবার ও পানীয় খাবার খাওয়ানো প্রয়োজন।দের জন্য যারা দুই বছর এর কম বয়সি তারা ৫০ থেকে ১০০ মিলিটার তরল খাবার খাবে এবং যারা ২ থেকে দশ বছরের মধ্যে তারা ১০০ থেকে ২০০ মিলি লিটার পানি পান করতে পারেন এবং ১০ বছরের বেশি শিশুরা তাদের ইচ্ছামতো খাবে।

 একদম ছোট শিশুদের বুকের দুধ বা বোতলের দুধ খাওয়াতে হবে বমি করলেও অল্প অল্প করে খাওয়াতে থাকতে হবে। এবং বুকের দুধ ছাড়া অন্য খাবার খায় এমন শিশুদের চিটার পানি ভাতের মার ডাবের পানি এছাড়া ঘরে তৈরি করা স্যালাইন খাওয়ানো যেতে পারে।

স্যালাইন কতক্ষণ রাখা যায়

প্যাকেট স্যালাইন বানানোর 12 ঘন্টা পর্যন্ত এই স্যালাইনটি সংরক্ষণ করতে পারেন এতে ফ্রিজে রাখার কোন দরকার নেই। এবং স্যালাইন গরম করা একদমই উচিত নয়। ১২ ঘণ্টার মধ্যে স্যালাইন খেয়ে নিতে হবে 12 ঘন্টা পার হয়ে গেলে সেটি ফেলে দিয়ে পুনরায় নতুন করে স্যালাইন তৈরি করতে হবে। এবং বাসায় বানানো স্যালাইন তৈরি করার 6 ঘন্টার মধ্যে তা খেতে হবে। এর বেশি সময় হয়ে গেলে তা ফেলে দিতে হবে।

ওর স্যালাইন এর মেয়াদ

স্যালাইন ওর স্যালাইন কেনার সময় অবশ্যই এর প্যাকেটের গায়ে লাগানো মেয়াদ উত্তীর্ণ তারিখ,ওর স্যালাইন এর লোগো,এস এম সি এর লোগো, রেজিস্টার্ড মার্ক এবং স্বীকৃতি শীল দেখে কেনা উচিত।মেয়াদ না দেখে কখনো স্যালাইন কিনবেন না এবং উত্তীর্ণ মেয়াদের স্যালাইন কখনোই খাবেন না।

লেখকের মন্তব্য

ওজন কমানো সহজ কাজ নয়। ধীরে ধীরে ওজন কমানোটাই শ্রেয় ।আশা করি উপরের আর্টিকেলটি সম্পূর্ণ মনোযোগ দিয়ে পড়েছেন এবং তাতে ওজন কমানোর উপায়, দ্রুত কিভাবে ওজন কমাবেন, ওজন কমানোর খাবার ইত্যাদি বিষয় সম্পর্কে সম্পূর্ণ ধারণা পেয়েছেন। লেখাটি ভালো লাগলে আপনার বন্ধুদের সাথে শেয়ার করতে পারেন এবং আরও নতুন নতুন তথ্য জানতে ওয়েবসাইটির সাথেই থাকুন।ধন্যবাদ।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

অর্ডিনারি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url